একসময় মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল হাতে লেখা চিঠি। সুখ-দুঃখের খোঁজখবর থেকে শুরু করে প্রেম-ভালোবাসার বার্তা, সামাজিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যেকোনো সংবাদ—সবই পৌঁছাত ডাকপিয়নের ঝুলিতে থাকা সেই চিঠির মাধ্যমে। আর চিঠি আদান-প্রদানের ভরসা ছিল রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লাল রঙের ডাকবাক্স। তবে তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই লাল ডাকবাক্স ক্রমেই কেবল অতীতের গল্প হয়ে উঠছে।
কালের পরিক্রমায় প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ডাকবাক্স এখন প্রায় হারিয়ে গেছে। যোগাযোগে ডাকবাক্সের জায়গা দখল করেছে মোবাইল ফোন, ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
এসব মাধ্যম মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুততা এনেছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে চিঠির কাগজে লেখা আবেগ ও সম্পর্কের অনন্য সৌরভ আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে একসময় ডাকবাক্স ছিল যোগাযোগের শেষ ভরসা। পরিবারের কিশোর সদস্যদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লেগে যেত—কে আগে গিয়ে চিঠি ফেলবে, সেই নিয়ে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় সংবাদ—সবই যেত ডাকবাক্সের মাধ্যমে।
কিন্তু আজ এসব ডাকবাক্স ব্যবহার না হওয়ায় পড়ে আছে অবহেলায়। কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও আবার মরিচায় ক্ষয়ে গেছে লাল রঙ।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে একটি খাল খননে ফিরেছে কৃষকের ভাগ্য, বদলে গেছে ২৫ হাজার একর জমির চিত্র
আদিতমারী উপজেলা ডাকঘর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শাখা অফিসগুলোতে একসময় প্রতিদিন নিয়মিত খোলা হতো ডাকবাক্স। বর্তমানে আর প্রতিদিন খোলার প্রয়োজন পড়ে না। চিঠির ব্যবহার কমে যাওয়ায় ডাকবাক্সগুলো দিন দিন অচল হয়ে পড়ছে।
লালমনিরহাট জেলা পোস্টমাস্টার নূরনবী বলেন, এই জেলায় ৮১টি পোস্ট অফিস রয়েছে। ডাকবাক্সগুলো নিয়মিত খোলা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তবে আগের মতো আর কেউ চিঠি ফেলে না। উপজেলা ও শাখা পর্যায়ের ডাকবাক্সগুলোতে ব্যক্তিগত চিঠি এখন খুব কমই পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ডাকবীমা কার্যক্রম ও অফিস-আদালতের চিঠিপত্র ছাড়া ব্যক্তিগত চিঠি নেই বললেই চলে।
একসময় সম্পর্কের মায়াজাল আর আবেগের প্রতীক ছিল ডাকবাক্স। প্রযুক্তির যুগে সেই স্মৃতিময় যোগাযোগ মাধ্যম আজ কেবল অতীতের গল্প হয়ে যাচ্ছে।